লালমনিরহাটে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র নির্মিত একটি সেতু পরিবর্তন এনেছে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গ্রামীণ অর্থনীতির। দুর্ভোগ মুছে দিয়েছে ১০টি গ্রামের প্রায় ২০হাজারের বেশি মানুষের। সেতুটি রত্নাই নদীর ওপর নির্মিত। এটি লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের দুড়াকুটি-মেঘারাম সড়কে।
স্থানীয়রা জানান, আগে বর্ষার সময় রত্নাই নদী পাড়ি দিতে হতো নৌকায় আর শুস্ক মৌসুমে ভরসা ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো ইউনিয়ন পরিষদ, দুড়াকুটি হাটসহ জেলা সদরের গন্তব্যে পৌঁছতে। এখন এক মিনিটের পথ। এ পরিবর্তন এনেছে ১২০মিটার দৈর্ঘ্য ও ৮মিটার প্রশস্তের সেতুটি।
মেঘারাম গ্রামের কৃষক নাজির হোসেন (৬০) বলেন, আগে চলাচল ব্যবস্থায় আমাদের সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হতো। এলজিইডির সেতুটি আমাদের গ্রামে অনেক পরিবর্তন এনেছে। রত্নাই নদীর ওপর সেতু পেতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
ইটাপোতা গ্রামের ভ্যানচালক মজিদুল ইসলাম (৫০) বলেন, সেতুটি নির্মাণের আগে আমাদের জীবন ছিলো অন্ধকারে নিমজ্জিত। কয়েক মাইল পথ ঘুরে আমাদেরকে গন্তব্যে যেতে হতো। এতে সময়, শ্রম ও অর্থ খরচ হতা। এখন খুব সহজে যাতায়াত করতে পারছি। সেতুর ওপর দিয়ে ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি।
দুড়াকুটি গ্রামের মুদি দোকানদার সুরত আলী (৫৫) বলেন, এখন সমস্যা হচ্ছে সেতুর পানি নিস্কাশন ঠিকঠাক হচ্ছে না। সেতুর সাথে পানির লাইন নিয়মিত ওয়াশ না করাই এ সমস্যা। এছাড়া সেতুর নির্মাণকাজ খুবই মজবুত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিস জানায়, ৬কোটি ২০লক্ষ টাকা ব্যয় নির্মিত সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে। ঠিকাদার ছিলেন প্রয়াত গোলাম রব্বানী। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সময় মতো সেতুর কাজ সম্পন্ন হচ্ছিল না। বিপাকে পড়ে যান এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। হতাশাগ্রস্থ হন স্থানীয়রা।
নানা জটিলতার পর অবশেষে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২২ সালে। প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সংযোগ সড়ক নির্মাণে। জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সেতু নির্মাণের নকশা করা হয়েছিল। সেতু সংলগ্ন জমি পেতে চরম বেগ পেতে হয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে। এজন্য মিলেনি বাড়তি বরাদ্দের। মুল বরাদ্দের অর্থে জমির জটিলতা নিরসন করতে সময় লেগে যায়।
নির্মাণ করা হয় সংযোগ সড়ক। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল শুরু হয় স্থানীয়দের। এখন ২৪ঘন্টায় সেতুর ওপর দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশলী এন্তাজুর রহমান বলেন, রত্নাই নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে প্রকৌশলীদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ঠিকাদারের সমস্যার কারনে জটিলতা তৈরি হয়েছিলো। সেতুটির নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় কাজের মান পুক্ত হয়েছে। সেতুর পানি নিস্কাশন পাইপগুলো নিযমিত পরিচর্যা করা হবে।